রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ১০:২৫ অপরাহ্ন

পরকীয়ার বানে ভেসে গেল সংসার, সন্তান হলো খুনি

পরকীয়ার বানে ভেসে গেল সংসার, সন্তান হলো খুনি

স্বদেশ ডেস্ক:

পারভীন আক্তার। স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে সংসার তার। প্রায় ১০ বছর আগে মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ফজলুল হক রিপন নামে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন পারভীন। সেই কিশোরকে পাতানো ভাই হিসেবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পরিচয়ও করিয়ে দেন। ধীরে ধীরে পরিবারের সদস্যরা টের পেতে থাকেন যে, পারভীনের সঙ্গে রিপনের অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। সঙ্গত কারণেই পারভীনের সংসারে শুরু হয় নানা রকম টানাপড়েন। স্বামী ও তিন সন্তান অনেক দিন ধরেই পারভীনকে এ পথ থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। এদিকে ১০ বছরের ব্যবধানে কিশোর রিপন হয়ে যান যুবক। অন্যদিকে পারভীনের তিন শিশুসন্তানও বড় হয়ে যায়। এরই মধ্যে দুই মেয়ের বিয়েও হয়েছে। কিন্তু রিপনের সঙ্গে পারভীনের অনৈতিক সম্পর্ক বন্ধ হয়নি।

সর্বশেষ, ছেলে মো. নয়নের (২২) সামনেই প্রেমিক রিপনের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হন পারভীন। এ নিয়ে রিপন ও নয়নের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার জেরে রিপনকে ছুরিকাঘাত করেন নয়ন। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে মৃত্যু হয় রিপনের। গত শুক্রবার রাজধানীর পল্লবী থানাধীন মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনের বি ব্লকের কনসালক্যাম্পে নয়নের ছুরিকাঘাতে খুন হন রিপন।

এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার কেরানীগঞ্জ থেকে নয়নকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনাল টিম। পরে তাকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবি। জিজ্ঞাসাবাদে নয়ন জানায়, তার মায়ের পরকীয়ায় তাদের পুরো পরিবারটি তছনছ হয়ে গেছে। সন্তানদের ভবিষ্যৎ ও মান-সম্মানের কথা ভেবে তার বাবা সব মেনে নিয়েছিলেন।

ডিবির মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনাল টিমের এডিসি আহসান খান আমাদের সময়কে বলেন, পল্লবীতে রিপন খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত নয়নকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

ডিবি কর্মকর্তাদের নয়ন জানিয়েছেন, তার বাবা একজন রিকশাচালক। তারা মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনের কনসালক্যাম্পে একটি ছোট্ট কক্ষ ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিলেন। ওই একটি কক্ষেই নয়ন ও তার দুই বোন ছোট থেকে বড় হয়েছেন। পরিবারের হাল ধরতে কিশোর বয়স থেকেই বিভিন্ন কাপড়ের দোকানের কর্মচারীর কাজ করছিলেন নয়ন। বেতনের পুরো টাকা তিনি মায়ের হাতেই তুলে দিতেন। এর পরও তার মা পরিচিতদের কাছ থেকে ধারদেনা করতেন। সেই দেনাও শোধ করতে হতো নয়নের বাবাকে। শৈশব থেকেই নয়ন ও তার দুই বোন তাদের মায়ের পরকীয়ার বিষয়টি জানতেন। বাবার কথা ভেবে তাদের অনেক কষ্ট হতো। বাবার মতো তিনিও পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে এত দিন চুপ ছিলেন।

রিপনকে ছুরিকাঘাত করার ঘটনা প্রসঙ্গে ডিবিকে নয়ন জানান, সেদিন দুপুরে তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে বাসায় আসেন রিপন। নয়ন তখন ঘরেই ঘুমে ছিলেন। তার বাবা পানি আনতে বাইরে গিয়েছিলেন। এ সময় অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন পারভীন ও রিপন। নয়নের ঘুম ভেঙে যায়। তিনি এর প্রতিবাদ করেন। এ কারণে নয়নকে মারধর করেন রিপন। পারভীন তখন রিপনের পক্ষ নেন। পরে নয়নের বাবা বাসায় এসে পুরো ঘটনা জানতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী ও স্বজনরা এগিয়ে আসেন এবং নয়ন ও রিপনের মধ্যে মিটমাট করে দেন। তবে নয়ন তা মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। এর পর সন্ধ্যায় নয়নের বাবা তার রিকশায় করে রিপনকে এগিয়ে দিতে যান। এ সময় চলন্ত রিকশার আরোহী রিপনের বুকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান নয়ন।

ডিবি সূত্র জানায়, নয়ন জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, রিপনকে ভয় দেখাতে ছুরিকাঘাত করেছিলেন তিনি। খুন করার কোনো ইচ্ছে তার ছিল না। এ কারণেই ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান। তবে রিপনের বুকের স্পর্শকাতর স্থানে আঘাতটি লাগায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় রিপনের ভাই নাজমুল হক পল্লবী থানায় হত্যা মামলা করেছেন। রিপন কারওয়ানবাজারের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পিয়ন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877